চন্দননগরের বিখ্যাত মুগের জিলিপি
মুগের জিলিপি। হ্যা,এটা খেয়েছি। অন্য রকম স্বাদ। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি গিয়েছিলাম চন্দননগর হয়ে কলকাতা। চন্দননগর শহরে ঢোকার আগেই গাড়ির চালক বললেন, দাদা-এখানে মুগের জিলাপি পাওয়া যায়। আমি বললাম-চলো সেখানে।
রাস্তার পাশে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল দোকানের ঠিকানা। দোকানে ঢুকে- ভাবলাম, মুগের জিলাপি খেয়ে জিব কেমন সাড়া দেয় দেখি। তারপর ইতিহাসের খোঁজ করব। মুগের জিলাপি চেকে পরখ করার জন্য, দুটো করে জিলাপি নিলাম। গরম তখনও।
মুখে মাখার ক্রিম এর কাছাকাছি নরম। দুবার মুখে নড়াচড়া করতে স্বাদে জীবের সঙ্গে মন ভরলো। খেতে খেতে অর্ডার। অর্থনীতির দ্বিতীয় ধাপ। আমরা তো নেবই। দোকানদারকে বললাম প্যাক করুন। খাওয়া শেষ হলে ছবি তুললাম। দোকানে লোকের যাতায়াত লেগেই আছে।
তারা আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিছুটা বিস্ময় নিয়ে। এবার ইতিহাসের পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। দোকানের বর্তমান মালিক বিশ্বনাথ ভৌমিক। তিনি জানালেন, তার বাবা পুলিনবিহারী আমল থেকে এই দোকান। এই দোকানটা ৮০ বছরের। রেলের জায়গায় তৈরি।
রেল কোম্পানি লোক মাঝেমধ্যে তাদের দোকান ভেঙে দেয়। কিছুদিন কারবার বন্ধ রেখে, আবার দোকান দেন। তাই বোঝা গেল দোকানের কাঠামোয় কেন আধুনিক ব্যাপার নেই। বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন এই মুগের জিলাপি তৈরি করতে।
তিনি জানালেন- শুধু হুগলির চন্দননগর নয়, পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোল বা কেশপুর ও ডেবরা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া অঞ্চল, ও হুগলী জেলার চন্দননগরের মুগের জিলিপি বিখ্যাত। শোনা যায়, মেদিনীপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ির আনুকূল্যে এই মিষ্টিটির প্রচলন হয়।
নাড়াজোল জমিদারি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মুগ কলাই উৎপন্ন হত, ফলে মিষ্টিটি সহজলভ্য হয়ে ওঠে।আবার কেউ বলেন, মুগের জিলিপি প্রস্তুত করেন পাঁশকুড়ার নিকটবর্তী হাউরের জনৈক পুলিনবিহারি ভৌমিক।
তার উত্তরসূরী কিশোরী রঞ্জন পাল, কালিপদ প্রামানিক, বাসুদেব মণ্ডল, শুকদেব সরকার, সুধীর কুমার পাড়ুই এর নাম জড়িয়ে রয়েছে এই মিষ্টির সাথে। তিনি আরও জানালেন, মুগের জিলিপির প্রধান উপকরণ মুগ ডাল, ঘি ও চিনি।
মুগের জিলিপির স্বাদ নির্ভর করে খামি প্রস্তুতির উৎকৃষ্টতার উপর। জিলিপির স্বাদ বাড়াতে কখনও কখনও মৌরী অথবা জিরে গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। মুগের জিলিপি আকারেকারে ছানার জিলিপির মত্, তবে এর পাপড়ি মোটা ও বর্ণ হলুদ।
লেখক: সাজেদ রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক,যশোর। সূত্র-যশোর খবর।