নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর।
কেশবপুরে ভূমিহীন মরিয়াম সুলতানা পরিবার নিয়ে উচ্ছেদ আতঙ্কে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একের পর এক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তিনি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার নিয়ে তাঁকে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ঘরমালিকের লোকের হাতে মারপিটের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভূমিহীন মরিয়াম সুলতানা সুমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দাখিল করেছেন।
উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের মরিয়াম সুলতানা সুমির কোথাও মাথা গোঁজার কোন নেই। তিনি যাযাবর জীবন যাপণ করতেন। কেশবপুরের সাতবাড়িয়া গ্রামের পশুহাটের পাশে আব্দুল মোড়লের জমিতে ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে স্বামী কামরুল ইসলাম ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন প্রায় তিন বছর। এরপর একই এলাকার মোজাহার মোড়লের অনুরোধে আব্দুল মোড়ল জমি ছেড়ে পুনরায় ৮২ হাজার টাকা খরচ করে সাতবাড়িয়া পশুহাটের ভেতর টিনের ঘর নির্মান করে সেখানে বসবাস করে আসছেন। ওই বসতবাড়িতে তিনি চা, মুদি ও ভাতের হোটেল করে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু মোজাহার মোড়ল চার মাস আগে ওই জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন।
পশুহাটের ভেতর দোকান করার সুবাদে বিভিন্ন গরু ছাগলের ব্যাপারী ও হাটুরেদের কাছে তার ৮০ হাজার টাকা অনাদায়ি বাকি রয়েছে। যে কারণে বসতভিটা ছাড়তে পারছেন না মরিয়াম সুলতানা। তাছাড়া কোথাও মাথা গোঁজার ঠাই না থাকায় তাদের শত অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে ওই ঘরে বসবাস করতে থাকেন। এরই সূত্র ধরে মোজাহার মোড়ল, মুক্তার আলী যোগসাজশে সুমির পরিবারকে উচ্ছেদ করতে অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এমন কি তারা খাওয়ার পানি নিতে দেবে না বলে পশুহাটের টিউবয়েলটি খুলে রাখাসহ বাথরুমের দরজায় তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর তাদের উচ্ছেদ করতে ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মোজাহার মোড়ল তার স্ত্রী শম্পা বেগম ও মেয়ে আল্পনা খাতুন তাদের বাড়িতে হামলা করে মরিয়াম ও তার মেয়ে শিশু কারিমা আফরিন রিয়াকে ঝাটা দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে আহত করে। বিষয়টি ওই সময়ই স্থানীয় চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন দফাদারকে জানালেও তারা কোন বিচার পাইনি বলে অভিযোগ করেছেন মরিয়াম সুলতানা। এরপর ভূমিহীন মরিয়াম সুলতানা সুমি ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ২৭ সেপ্টম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন।
জমির মালিক মোজাহার মোড়ল বলেন, তারা যেখানে বসবাস করে তা আমার জায়গা। তারা দোকান করার কথা বলে বসতঘর করে বসবাস করছে। এখন সেটা বসতবাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। তারা আমার জায়গা ছাড়ছে না বলে আমি তাদের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছি। বিষয়টি এখনও নিরসন হয়নি।
সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন দফাদার বলেন, মরিয়াম যেখানে বসতবাড়ি করেছে তা মোজাহারের জায়গা। মোজাহার আমার কাছে অভিযোগ করায় চার মাসের মধ্যে মরিয়ামকে জায়গা ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত দিয়েছি। মরিয়ামদের মারপিটের বিষয়ে আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিল। আমি তাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূসরাত জাহান জানান, আমি কর্মক্ষেত্রের বাইরে ছিলাম। বিষয় জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।